বিয়ের আগে প্রেম ভালবাসা সম্পূর্ণ হারাম
প্রেম হারাম হলে ইউসুফ জুলেখা, শিরি ফরহাদ, লাইলি মজনু প্রেম করতো না!
আধুনিক প্রেমিক যুগলদের যখন বলা হয় বিবাহপূর্ব প্রেম নিষিদ্ধ, তখন তারা ঠিক উপরের বাক্যটা ছুড়ে দেয়। আসলেই কি ইউসুফ আদম আলাইহি সাল্লাম প্রেম করেছিল?
আসুন, সত্যতা জেনে নেই।
কুরআন মাজিদের ১২ নাম্বার সূরা, সূরা ইউসুফ এর কয়েকটা আয়াত দেখুন, আর সে যে মহিলার (জুলেখা) বাড়িতে ছিল, ঐ মহিলা তাকে ফুসলাতে লাগল এবং দরজাসমূহ বন্ধ করে দিল। সে মহিলা বলল— ‘শুন! তোমাকে বলছি, এদিকে আস।’ সে বলল— ‘আল্লাহ্ রক্ষা করুন’; তোমার স্বামী আমার মালিক। তিনি আমাকে সযত্নে থাকতে দিয়েছেন। নিশ্চয় সীমা লংঘনকারীগণ সফল হয় না।
—[সূরা ইউসুফ, আয়াত ২৩]
তারা উভয়ে ছুটে দরজার দিকে গেল এবং মহিলা ইউসুফের জামা পিছন দিক থেকে ছিঁড়ে ফেলল। উভয়ে মহিলার স্বামীকে দরজার কাছে পেল। মহিলা বলল— ‘যে ব্যক্তি তোমার পরিজনের সাথে কুকর্মের ইচ্ছা করে, তাকে কারাগারে পাঠানো অথবা অন্য কোন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেয়া ছাড়া তার আর কি শাস্তি হতে পারে?’
—[সূরা ইউসুফ, আয়াত ২৫]
মোটামুটি ঘটনাটা এমন, ইউসুফ আদম আলাইহি সাল্লামকে তার ভাইয়েরা কুয়ায় নিক্ষেপ করে চলে এসেছিল ছোটতে। সেই কুয়া থেকে তুলে এনেছিল কিছু পথচারী বা বণিক। তাদের কাছ থেকে মিশরের আযিয বা মন্ত্রী তাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে রাখলেন। যখন সে যৌবনপ্রাপ্ত হলো তখন একদিন তার মনিবের/মালিকের স্ত্রী যাকে আমরা জুলেখা নামে চিনি, তিনি ইউসুফ আদম আলাইহি সাল্লাম এর কাছে নিবেদন করলেন। ইউসুফ আদম আলাইহি সাল্লাম কি বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেন, মাআযাল্লাহ্ = আল্লাহ্ রক্ষা করুক। এই বলে তিনি দরজার দিকে দৌঁড়ে পালাচ্ছেন, পিছন থেকে জুলেখা ধরার জন্য দৌড়াচ্ছে, এমন কি ইউসুফের পিঠের দিকের জামা ছিড়ে যায় যা পরের আয়াত গুলোতে বিস্তারিত আছে। দরজা খুলতেই তার স্বামী, এবং স্বামীকে দেখতে পেয়ে জুলেখা কেমন পল্টি মেরে বলল ইউসুফকে জেলখানায় বন্দি করুন অথবা কঠিন শাস্তি দিন।
ইউসুফ আদম আলাইহি সাল্লাম একজন নবী। ওনার পক্ষে অন্যের স্ত্রীর সাথে ইশক/মুহাব্বাত/প্রেম প্রশ্নই আসেনা। যারা বলে, তাহলে এটা One Side Love ছিল জুলেখার পক্ষ থেকে। অর্থাৎ জুলেখা তাকে ভালবাসত ইত্যাদি, এই কথা টাও ভুল। যদি জুলেখা ভালই বাসে তাহলে সে পল্টি মারবে কেন? এটা ভালবাসা ছিলনা, এটা মোহ/নেশা ছিল মাত্র। কেননা ইউসুফ আদম আলাইহি সাল্লাম এর সৌন্দর্যতার ব্যাপারে ধারনাও করতে পারবেননা আপনি। যখন জানাজানি হয়ে গেল যে, মন্ত্রীর স্ত্রী হয়ে বাড়িতে আশ্রয়প্রাপ্ত ছেলের সাথে এমন আচরন? যেসব মেয়েরা জুলেখাকে ছি ছি করছিল, জুলেখা সেই সব মেয়েকে দাওয়াত দিলেন, তারা আসলো, ফল দিল, হাতে ধারালো ছুরি দিল সবাইকে, যেন ফল কেটে খায়। ইউসুফকে বলল, তাদের সামনে আসতে। সেসব মেয়েরা ইউসুফ আদম আলাইহি সাল্লামকে দেখছে আর ফল কাটছে, কখন যে হাতের আঙুল কেটে ফেলেছে টেরই পায়নি। তবুও ইউসুফের চেহারা থেকে চোখ সরাতে পারেনি তারা।
—সূরা ইউসুফের ৩১ নাম্বার আয়াত টা দেখুন প্লিজ।
কাজেই প্রমানিত যে, ইউসুফের প্রতি জুলেখার মনে যা ছিল তা প্রেম/ভালবাসা নয়, বরং মোহ/নেশা। কাজেই কোনই সুযোগ নেই এগুলো দিয়ে বিয়ের আগে ছেলে মেয়ের প্রেম ভালবাসাকে জায়েজ করবার। তাছাড়া জুলেখা ভাল মেয়ে ছিলনা, যদি তিনি ভাল মেয়ে হয়ে থাকেন তাহলে নিজ স্বামীকে রেখে অন্য পুরুষকে নিজের দিকে ডাকবে কেনো? “প্রেমের মরা জলে ডুবেনা” গানটার অধিকাংশই ভুল। “প্রেম করেছেন ইউসুফ নবী তার প্রেমে জুলেখাবিবি গো” এই বাক্য ভুল, তা উপরে আলোচনা করেছি। গানটিতে আইয়ুব নবীর ব্যাপারেও ভুল বলা হয়েছে। আইয়ুব নবীকে আল্লাহ্ পরীক্ষা করেছিলেন এ কথা সত্য। তিনি অসুস্থ ছিলেন, এ কথাও ঠিক। তবে সারা শরীরে পোকা হয়েছিল মর্মে বিশুদ্ধ বর্ননা নেই। আর পোকা না হয় হলো, তাই বলে রহিমা বিবি নিজের জিহবা দিয়ে সেগুলো চাটতে যাবেন কেনো? আল্লাহ্ কি তার হাত দেয়নি?
—বুঝলাম ইউসুফ নবী প্রেম করে নাই, তাহলে লাইলি মজনু শিরি ফরহাদ এরাও ভুল? এরাও প্রেম করে পাপ করেছে?
“লাইলি মজনু” একটি কাব্যগ্রন্থ মাত্র, যা কবি দৌলত উজির বাহরাম খান রচিত লায়লী-মজনু কাব্য পার্সিয়ান তথা ইরানি কবি জামীর লায়লী-মজনু নামক কাব্যের ভাবানুবাদ। যা আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে লেখা হয়েছে।
শিরি ফরহাদের কাহিনীও একই ব্যাপার। কবি ফেরদৌসি তার শাহনামা কাব্যনামায় লিখেছেন এটা।
কাব্য, উপন্যাস, গল্প এগুলো লেখকের নিজস্ব মস্তিষ্কের চিন্তা মাত্র। চিত্রায়িত কোন চরিত্রকে ইসলামের দিকে সম্পর্কিত করা উচিত নয়। ইসলামিক যেকোন বিষয়ের প্রধান উৎস কুরআন ও হাদিস। এ ছাড়া অন্য যেকোন লেখকের কথাকে ইসলামের দিকে নেসবত করা একেবারেই বিবেক বিরোধী কাজ। বিয়ের আগে “ইসলামিক প্রেম” বলতে কোন কিছুরই অনুমতি দেয়না ইসলাম। এমনকি এটা বাইবেলেও অনুমতি দেয়না। বিস্তারিত দেখুন— গসপেল অফ ম্যাথিউ এর চ্যাপ্টার ৫ এর ভার্স ২৮-৩০ পর্যন্ত।
ইসলামে “বিয়ের আগে প্রেম ভালবাসা টোটালি হারাম।” বিয়ের আগে হালাল হবার কোন সুযোগ নেই। বিয়ের আগে ছেলে মেয়েদের কোনোরকম প্রেম ভালবাসা জায়েজ নয়। একেবারেই হারাম। এমনকি বিয়ের পর নিজ অর্ধাঙ্গিনী রেখে অন্যের সাথে প্রেম করা ডাবল হারাম। কেউ কি বলতে পারবে, ৪ বছর প্রেম করেছি, রাতের পর রাত ফোনে কথা বলেছি অথচ চুমু দেইনি? হবু বউ, হবু বর মনে করে কথা সেদিকে নিয়ে যায়নি? কে এমন আছে, যে দেখা করতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে আছে অথচ পাশের মানুষটিকে জড়িয়ে ধরেনি, হাত ধরে হাটেনি? রসূল ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন— দুই চোখের যিনা তাকানো, কানের যিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের যিনা আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের যিনা (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশে) স্পর্শ করা আর পায়ের যিনা ব্যভিচারের উদ্দেশে অগ্রসর হওয়া এবং মনের যিনা হলো চাওয়া (যেনার উদ্দেশ্যে)।
—[মিশকাতুল মাসাবীহ হাদিস নাম্বার ৮৬]
হাত ধরা, টাচ করা, তাকিয়ে থাকা, সেক্সুয়াল কথা বলা, এগুলো সবই যিনার পর্যায়ভুক্ত।
Comments
Post a Comment