ইসলামে প্রেমের বিধান
ইসলামে প্রেমের বিধান—
بسم الله الرحمن الرحيم
পরপুরুষ বা পরনারীর সঙ্গে নিঃসন্দেহে প্রেম হারাম!
কেননা,
১। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন—
“তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর তাদেরকে স্ত্রী করার জন্যে, কামবাসনা চরিতার্থ করার জন্যে কিংবা গুপ্ত প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্যে নয়।”
—[সূরা মায়িদা: ৫]
২। তাছাড়া এ জাতীয় প্রেম নর-নারীকে যিনার নিকটবর্তী করে দেয়। আর যিনা মারাত্মক একটি কবিরা গুনাহ। যিনা তথা অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক হারাম এবং যে সকল জিনিস যিনার নিকটবর্তী করে দেয় তাও হারাম।
আল্লাহ্ তা'আলা বললেন—
“আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ"।
—[সূরা ইসরা: ৩২]
৩। প্রেম করলে শয়তান অবশ্যই যিনা করতে প্রলুব্ধ করবে। প্রেমিক-প্রেমিকা নির্জনতা কামনা করবে। আর এটা হারাম।
রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
“শুনে রাখ, কোন পুরুষ যেন কোন মহিলার সঙ্গে নিভৃতে একত্রিত না হয় অন্যথায় শয়তান অবশ্যই তৃতীয় জন হিসাবে হাজির থাকে”।
—[ইবনু মাজাহ: ২৩৬৩, তিরমিযি: ২১৬৫]
৪। অপর হাদীসে রসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন—
“দুই চোখের ব্যভিচার হল হারাম দৃষ্টি দেয়া, দুই কানের ব্যভিচার হল পরনারীর কণ্ঠস্বর শোনা, যবানের ব্যভিচার হল অশোভন উক্তি, হাতের ব্যভিচার হল পরনারী স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হল গুনাহর কাজের দিকে পা বাড়ান, অন্তরের ব্যভিচার হল কামনা-বাসনা আর গুপ্তাঙ্গঁ তা সত্য অথবা মিথ্যায় পরিণত করে”।
—[মিশকাত: ১/৩২]
বলা বাহুল্য, এর সবগুলোই ধীরে ধীরে হারাম-প্রেমে অনুপ্রেশ করে থাকে!
৫। এছাড়াও হারাম-প্রেম অনেক সময় বান্দাহকে শিরকের নিকটবর্তী করে দেয়। কারণ অনেক সময় তারা একে অপরকে এতটাই ভালবাসা শুরু করে দেয় যে প্রকার ভালবাসা পাওয়ার দাবীদার একমাত্র আল্লাহ্।
আল্লাহ্ তা'আলা বলেন—
“আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে।”
—[সূরা বাক্বারা: ১৬৫]
🍁 বর্তমানে আমাদের সমাজে টেলিভিশন, পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন, নাটক, সিনেমা ভালোবাসার নামে যা প্রচার করা হয় তার কারণেই হয়ত আপনার মাঝে এ জাতীয় প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে।
মূলতঃ ছেলে এবং মেয়ে দু’জনের মধ্যে ইসলামিকভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলার একটাই পদ্ধতি-বিয়ে। সুতরাং শরীয়তের বাঁধা না থাকলে এবং বিয়ের জন্য উপযুক্ত মনে হলে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিবে। প্রস্তাব গৃহীত হলে বিয়ের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে তুলবে। প্রস্তাব গৃহীত না হলে ভুলে যাবে। ভুলে না যাওয়ার মানে হচ্ছে, শয়তানের পক্ষ থেকে বিপথগামী হওয়ার জন্য দরজা খুলে রাখা।
🍁 বিয়ের পূর্বে প্রেম-ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা ইসলামি-শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয় এজন্য যে, ইসলামের বিধি-বিধান অনুযায়ী কোন পরনারী কোন পরপুরুষের সান্নিধ্যে আসতে পারেনা। দেখা-সাক্ষাৎ বা ফোন, নেট ইত্যাদির মাধ্যমে প্রেমালাপ করা যায় না।
ইসলামি-শরিয়তের দৃষ্টিতে এগুলো এক প্রকার যিনা বা ব্যভিচার। এমনকি মনে মনে কল্পনা করে তৃপ্তি অনূভব করার দ্বারাও অন্তরের যিনা হয়। যা হারাম এবং কবিরা গুনাহ।
—[মুসলিম: ২/৩৩৬]
🍁 ইবন আব্বাস রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু সূত্রে নবী ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন পুরুষ যেন অপর কোন মহিলার সাথে নির্জনে অবস্থান না করে, কোন স্ত্রীলোক যেন কোন মাহরাম সঙ্গী ব্যতীত সফর না করে। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রসূল ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! অমুক অমুক যুদ্ধের জন্য আমার নাম তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আমার স্ত্রী হজ্জে যাবে। তখন রসূল ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তবে যাও নিজ স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ কর।’
—[বুখারি: ২৭৯৮]
🍁 অপর হাদিসে বলা হয়েছে—
ওমর রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যখনই কোন পুরুষ পর নারীর সাথে নির্জনে দেখা করে তখনই শয়তান সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত হয়।”
—[সুনানে তিরমিযী: ২১৬৫, সহীহ ইবনে হিব্বান: ৫৫৮৬]
Comments
Post a Comment