দরুদ শরীফ সংক্ষেপে লেখা যাবে না! ❌
♦রসূল ﷺ এর নাম মুবারক লেখার পর দরুদ শরীফ সংক্ষেপে লেখা যাবে না (১ম পর্ব)
রসূল ﷺ নাম মুবারক এর সাথে দরুদ শরীফ সংক্ষেপে
(সাঃ), (ছঃ), (দঃ), (সা.), (সা:), (স), (Pbuh), (Pbh), (D), (S), (Sm), (ﺻﻠﻠﻢ), (ﺻﻠﻌﻢ), (ﻋﻢ), (ﺹ)
ইত্যাদি সংক্ষিপ্ত শব্দ দ্বারা দরুদ লেখার বিধান:
📖 ১ম দলিল—
নূরে মুজাস্সাম, হজুরপূর নূর ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক লিখার পর পূর্ণ দরুদ শরীফ লিখা হাদীস শরীফে আদেশ করা হয়েছে—
عن ابن عباس قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: “من صلى عليّ في كتاب، لم تزل الصلاة جارية له ما دام اسمي في ذلك الكتاب
অর্থ: যে ব্যক্তি আমার উপর ছলাত বা দরুদ শরীফ লিখবে, সর্বদাই আমার নাম মুবারকের সাথে ঐ লিখায় পূর্ণ দরুদ শরীফ লিখবে।
📖 দলিল সমূহ—
(ক.) মুজামুল কবীর তাবরানী ১৯/১৮১: হাদিস ৪৪৭
(খ.) মুজামুল আওসাত তাবরানী ২/২৩২: হাদিস১৮৩৫
(গ.) তারগীব ওয়াত তারহীব ২/৩৩০: ১৬৯৭
(ঘ.) মাযমাউয যাওয়ায়েদ ১/১৬৩: হাদিস ৫৭৭
(ঙ.) জামিউল আহাদীস ২১/১১: হাদিস ২২৭৭৩
(চ.) কানযুল উম্মাল ১/৫০৭: হাদিস ২২৪৩
(ছ.) লিসানুল মিযান ২/৩০০
(জ.) তবাকাতে সুফিয়াতুল কুবরা ১/১৮০
(ঝ.) তাফসীরে ইবনে কাছীর: ৬/৪৭৭
(ঞ.) তাফসীরে কুরতুবী ১৪/২৩৪
(ট.) তাফরীরে রুহুল বয়ান ৭/১৭৭
(ঠ.) খাছায়েছুল কুবরা ২/৩৯০
(ড.) শিফা লিল কাদ্বী আয়ায ২/৬৮
(ঢ.) মুখতাছুরু তারিখুত দিমাস্ক ১/৩১০
উক্ত হাদিস শরীফ হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু উনার সনদে বর্ণিত আছে। একাধিক সনদে বর্ণিত থাকায় উক্ত হাদিস শরীফের সনদে কোন সমস্যা নেই।
অথচ, বর্তমানে প্রকাশিত প্রায় সকল ধরণের কিতাবাদি, বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা ইত্যাদিতে দেখা যায় হুযূর পাক ছল্লালহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক শেষে সংক্ষেপে দরুদ শরীফ অর্থাৎ (সাঃ), (ছঃ), (দঃ), (সা.), (সা:), (স), (Pbuh), (Pbh), (D), (S), (Sm), (ﺻﻠﻠﻢ), (ﺻﻠﻌﻢ), (ﻋﻢ), (ﺹ)
ইত্যাদি সংক্ষিপ্ত শব্দ দ্বারা দরুদ লেখা থাকে। এ সংক্ষেপে লেখার প্রধান কারণ হিসাবে যা প্রকাশ পায়, তা হলো রসূল ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক বার বার লিখতে গেলে বেশি কাগজ লাগা, সময় বেশি লাগা ইত্যাদি [নাঊযুবিল্লাহ্!]
দরুদ শরীফ পূর্ন লেখা নবীজী ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশ। দরুদ শরীফ পূর্ণ করে লেখা আদব। আর সংক্ষেপে লেখা দ্বারা সময়ের অভাব, কাজ বাঁচানো, অধৈর্য ভাব ইত্যাদি বুঝায়। যেটা স্পষ্ট অবজ্ঞা। কারন সবকিছুর মূল যিনি উনার জন্য যদি সময়, কাগজ, ধৈর্য পাওয়া না যায় তাহলে এর চাইতে বড় অবমাননা আর কি হতে পারে?
দরুদ শরীফ অর্থাৎ, “ছল্লালহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” আরবীতে হোক, ফারসিতে হোক, উর্দুতে হোক, বাংলায় হোক, ইংরেজিতে হোক অথবা যেকোন ভাষায় হোক না কেন দরুদ শরীফ পূর্ণভাবেই লিখতে হবে।
👉🏻 কারন ইসলামী শরীয়তের ফতোয়া মোতাবেক ”দরুদ শরীফ” সংক্ষেপে লেখা যেমন– (সাঃ), (ছঃ), (দঃ), (সা.), (সা:), (স), (Pbuh), (Pbh), (D), (S), (Sm), (ﺻﻠﻠﻢ), (ﺻﻠﻌﻢ), (ﻋﻢ), (ﺹ)
ইত্যাদি অক্ষরে লেখা আম ফতোয়া মুতাবিক মাকরুহ এবং খাছ ফতোয়া মুতাবিক কুফরী। এ বিষয়ে বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাব তাতারখানিয়ায় স্পষ্ট ফতোয়া দেয়া হয়েছে।
”তাতারখানিয়া” কিতাবে বর্ণিত রয়েছে সংক্ষিপ্ত দরুদ শরীফ লিখাকে শানে নবুওয়াতকে খাটো করার অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে। যা কুফরীর অর্ন্তভূক্ত।
👉🏻 উল্লেখ্য, স্বয়ং মহান আল্লাহ্ পাক ও ফিরিশতা আলাইহিমুস সালাম যার প্রতি দরুদ শরীফ প্রেরণ করেন এবং ঈমানদারগনকে দরুদ শরীফ পাঠ করার জন্য আল্লাহ্ পাক আদেশ করেছেন এবং অসংখ্য হাদিস শরীফে দরুদ শরীফ পাঠের ফযীলত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
আর যারা দরুদ শরীফ পাঠ করতে গাফলতী করে, তাদের সম্পর্কে হাদিস শরীফের অনেক দুঃসংবাদ রয়েছে এবং তাদের শেষ ফায়সালা হলো জাহান্নাম। সূতরাং হুযূর পাক ছল্লালহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নাম মুবারক যতবারই লিখা হবে ততবারই পূর্ণ দরুদ শরীফসহ এবং ব্রাকেট ‘()’ বিহীন লিখতে হবে। আল্লাহ্ পাক আমাদের বুঝার তাওফিক দান করুন। আমিন 🤲🏻
♦রসূল ﷺ এর নাম মুবারক লেখার পর দরুদ শরীফ সংক্ষেপে লেখা যাবে না (২য় পর্ব)
রসূল নাম মুবারক এর সাথে দরুদ শরীফ সংক্ষেপে
(সাঃ), (ছঃ), (দঃ), (সা.), (সা:), (স), (Pbuh), (Pbh), (D), (S), (Sm), (ﺻﻠﻠﻢ), (ﺻﻠﻌﻢ), (ﻋﻢ), (ﺹ)
ইত্যাদি সংক্ষিপ্ত শব্দ দ্বারা দরুদ লেখার বিধান:
📖 ২য় দলিল—
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে—
من صلي علي في كتاب لم تزل صلاته جارية له ما دام اسمي في ذلك الكتاب
অর্থ: সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুজুর পাক ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন,
“যে ব্যক্তি আমার উপর দরুদ শরীফ লিখবে, অবশ্যই ঐ দরুদ শরীফ লিখায় সর্বদা আমার নাম মুবারক উনার সাথে দরুদ শরীফ পূর্ন ভাবে লিখবে।”
—[তাফসীরে রূহুল বয়ান: ৭ম খন্ড, ২২৮ পৃষ্ঠা]
উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় সকল ফতোয়ার কিতাবে আম ভাবে দরুদ শরীফ সংক্ষেপে লেখা মাকরূহ তাহরীমী বলা হয়েছে এবং খাছ ভাবে কুফরী ফতোয়া দেয়া হয়েছে ।
এ প্রসঙ্গে ফতোয়ার কিতাব সমূহে ফতোয়া দেয়া হয়েছে—
” ويكره ان يرمز للصوة والسلام علي النبي عليه الصلاة و السلام في الخط بان يقتصر من ذالك علي الحرفين هكذا (عم) او نحو ذالك كمن يكتب ( صلعم) يشير به الي ( صلي الله عليه و سلم ) و يكره حذف واحد من الصلاة و التسليم و الاقتصار علي احدهم . و في الحديث ( من صلي علي في كتاب لم تزل صلاته جاريت لم ما دام اسمي في ذالك الكتاب ) كم في انوار المشارق لمفتي حلب .
অর্থ: “সাইয়্যিদুনা নূরে মুজাসসাম, হাবিবুল্লাহ, হুজুর পাক ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ছলাত ও সালাম লিখতে সংক্ষেপ করা মাকরুহ তাহরীমি |
যেমন– সংক্ষেপ দুটি অক্ষর (عم) লেখার মাধ্যমে এবং অনুরুপ صلي الله عليه و سلم বাক্যকে ইঙ্গিত বুঝতে ( صلعم) সংক্ষেপে লেখা। ছলাত এবং সালাম শব্দ দুখানার যেকোন একখানা হরফ বা বাদ দেয়া এবং যেকোন একখানা শব্দ সংক্ষেপ করা মাকরুহ তাহরীমি। হাদীস শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে (যে ব্যক্তি আমার উপর ছলাত বা দরুদ শরীফ লিখবে সর্বদায় আমার নাম মুবারক উনার সাথে ঐ লিখায় পূর্ণ দরুদ শরীফ লিখবে) অনুরুপ বর্ণনা ‘আনওয়ারুল মাশারিক লিমুফতী হলব‘ কিতাবে আছে।”
👉🏻 এ প্রসঙ্গে ফতোয়ার বিখ্যাত কিতাব “তাতারখানিয়া” কিতাবে এ ব্যাপারে আরো কঠিন ফয়সালা বর্ণিত রয়েছে এবং সংক্ষিপ্ত দরুদ শরীফ লিখাকে শানে নবুওয়াত উনাকে খাটো করার অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ”তাহতাবী আলা দুররিল মুখতার” এর ১ম জিলদ, ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে– (ص) অক্ষর দ্বারা দরুদ শরীফ লিখা মাকরুহ, দরুদ শরীফ পূর্ণ ভাবে লিখবে!
👉🏻 ফতোয়ার কিতাব ”তাতারখানিয়াতে“ উল্লেখ আছে,
”যে ব্যক্তি হামযা এবং মীম দ্বারা দরুদ শরীফ লিখলো সে কুফরী করলো। কেননা এটা ইহানত বা অবজ্ঞা। আর নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদের ইহানত বা অবজ্ঞা করা নিঃসন্দেহে কুফরী!”
আল্লাহ্ পাক আমাদের বুঝার তাওফিক দান করুন!
আমিন 🤲🏻
♦রসূল ﷺ এর নাম মুবারক লেখার পর দরুদ শরীফ সংক্ষেপে লেখা যাবে না (৩য় পর্ব)
রসূল নাম মুবারক এর সাথে দরুদ শরীফ সংক্ষেপে
(সাঃ), (ছঃ), (দঃ), (সা.), (সা:), (স), (Pbuh), (Pbh), (D), (S), (Sm), (ﺻﻠﻠﻢ), (ﺻﻠﻌﻢ), (ﻋﻢ), (ﺹ)
ইত্যাদি সংক্ষিপ্ত শব্দ দ্বারা দরূদ লেখার বিধান:
📖 ৩য় দলিল—
শাইখ আব্দুল আযীয ইবনে বায বলেন, “আমরা জানি যেমনিভাবে রসূল ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরূদ সালাতের তাশাহুদের পর, খুতবার সময়, দো‘আ ইস্তেগফারের সময়, আজানের পর, মসজিদে প্রবেশে ও বাহির হওয়ার সময় অনুরূপভাবে কোনো কিতাব, প্রবন্ধ, রিসালা ও লেখনি লেখার সময় ও রসূল ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাম মোবারক লেখার সময় পুরো দরুদ লেখা সূন্নাত। আর দরূদটি পরিপূর্ণ লিখতে হবে, যাতে আল্লাহর আদেশের পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন হয় এবং একজন পাঠক যখন তা পাঠ করে সে বুঝতে পারে যে এখানে দরূদ পড়া হয়েছে। সংক্ষিপ্তাকারে যেমন— (সাঃ), (ছঃ), (দঃ), (সা.), (সা:), (স), (Pbuh), (Pbh), (D), (S), (Sm), (ﺻﻠﻠﻢ), (ﺻﻠﻌﻢ), (ﻋﻢ), (ﺹ)
ইত্যাদি লেখা কোনো ক্রমেই উচিত নয়। অনেককে এভাবে লেখতে দেখা যায়।
এটি আল্লাহ তা‘আলার বাণী— {صَلُّوا عَلَيْهِ وسَلِّمُوا تَسْلِيماً} (الأحزاب:56). এর পরিপন্থী। এছাড়াও এ দ্বারা দরুদ পড়ার উদ্দেশ্য পূরণ হয় না এবং দরুদ পড়ার যে সব লাভের কথা কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত তা হতে বঞ্চিত হয়। আবার অনেক সময় দেখা যায় একজন পাঠক সংকেত দ্বারা কি উদ্দেশ্য তা বুঝতে পারে না এবং সজাগ থাকে না। এ কারণেই আহলে ইলম সংকেত দিয়ে দরূদ শরীফ লেখাকে অপছন্দ করেন।
—[মাজমুয়ায়ে ফতওয়ায়ে ইবনে বায, পৃষ্ঠা: ৩৯৭-৩৯৯/২]
ইবনে বায এতদ্ব:সম্পর্কীয় ফতোয়ার শেষে লিখেন—
هذا ووصيتي لكل مسلم وقارئ وكاتب أن يلتمس الأفضل ويبحث عما فيه زيادة أجره وثوابه ويبتعد عما يبطله أو ينقصه . نسأل الله سبحانه وتعالى أن يوفقنا جميعا لما فيه رضاه ، إنه جواد كريم وصلى الله وسلم على نبينا محمد وعلى آله وصحبه .
” مجموع فتاوى الشيخ ابن باز ” ( 2 / 397 – 399 )
সুতরাং এটা আমার ওসিয়্যত যে সকল পাঠক, লেখকরা যাতে উত্তম এবং অধিক সওয়াব এবং প্রতিদানপূর্ন বিষয়টাকে গ্রহন করেন এবং সংক্ষিপ্ততা পরিহার করে পরিপূর্ণভাবে ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পড়েন ও লিখেন।
আল্লাহ্ আমাদের সকলকে তার সন্তুষ্টিমত আমল করার তৌফিক দান করুন। নিশ্চয় তিনি দানশীল এবং সম্মানী–আর ছলাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার পরিবার পরিজন এবং সাহাবাগনের প্রতি।
👉🏻 তাফসীরে জালালাইন শরীফেও উল্লেখ করা হয়েছে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নবিয়্যীন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক শুনার পর দরুদ শরীফ মুখে উচ্চারণ করা ওয়াজিব, অনূরূপভাবে কলমে লিখাও ওয়াজিব। অর্থাৎ কলমে লিখতে হলেও পূর্ণ দরুদ শরীফ ও সালাম “ছল্লালহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” সম্পূর্ণটাই লিখতে হবে। সংক্ষিপ্তাকারে লিখা আমভাবে মাকরূহ তাহ্রীমী আর খাছভাবে কুফরীর অন্তর্ভূক্ত।
একটি আনুসাংঙ্গিক ফতোয়া নোট করবো নাজায়েজ টা মাকরুহ পর্যায়ে:
قال السيوطي رحمه الله تعالى في كتابه ” تدريب الراوي في شرح تقريب النواوي ” : ( ويكره الاقتصار على الصلاة أو التسليم هنا وفي كل موضع شرعت فيه الصلاة كما في شرح مسلم وغيره لقوله تعالى : ( صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ) إلى أن قال : ويكره الرمز إليهما في الكتابة بحرف أو حرفين كمن يكتب ( صلعم ) بل يكتبهما بكمالها ) انتهى المقصود من كلامه رحمه الله تعالى ملخصا .
ইমাম সূয়ুতী বলছেন এটা মাকরুহ। উত্তম হলো صلي الله عليه و سلم পরিপূর্ণ লেখা ص বা صل কিংবা صلعم লেখা মাকরুহ ।
—[তাদরীবুর রাবী ফি শারহি তাক্বরীবুন নবভী কিতাবের]
—[মুসলিম শরীফের শরহ]
এবং وقال العلامة السخاوي ـ رحمه الله تعالى ـ في كتابه (فتح المغيث في شرح ألفية الحديث) للعراقي ما نصه: ( واجتنب أيها الكاتب (الرمز لها) أي الصلاة والسلام على رسول الله صلى الله عليه وسلم في خطك، بأن تقتصر منها على حرفين، ونحو ذلك، فتكون منقوصة صورة كما يفعله (الكسائي)، والجهلة من أبناء العجم غالباً، وعوام الطلبة، فيكتبون بدلاً من صلى الله عليه وسلم (ص) أو (صم) أو (صلعم)، فذلك لما فيه من نقص الأجر لنقص الكتاب خلاف الأولى).
👉🏻 আল্লামা সাখাভী রহমাতুল্লাহি আলাইহে তার ফতহুল মুগীছ ফি শারহি আলফিয়াতুল হাদীসে ইরাকী থেকে কোড করেন—
“হে লেখকগন! দরুদ শরীফ লেখার ক্ষেত্রে চিহ্ন ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এবং একি অক্ষর কিংবা দুইটি অক্ষর না লিখে পরিপূর্ণভাবে “صلي الله عليه و سلم ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম” লিখুন।
👉🏻 অনারব- ছাত্র এবং কাছায়ীর মত (ص স:) লিখবেন না।
কারন তা পরিপূর্ণ দুরুদ লেখার ফজিলত থেকে বঞ্ছিত হয়।
صلی اللہ علیہ وسلّم
ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জায়গায় صلعم/(সাঃ),(সঃ) ইত্যাদি লেখা মোটেই জায়েয না। এটা সাধারন মানুষতো দূরের কথা চৌদ্দশত বৎসরের বড় বড় বিজ্ঞ ও মহাপুরুষদের মাঝে প্রসারিত হয়েছে।
কেউ صلعم কেউ صللم কেউ علیہ الصلوۃ والسلام এর বদলে عم লিখে থাকে। সামান্য কালি, এক আঙ্গুল কাগজ বা এক সেকেন্ড সময় বাচানোর জন্য কতই বঞ্ছিত ও হতভাগ্য হয়ে যায় ।
👉🏻 ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) বলেছেন— “যে ব্যক্তি দরুদ শরীফকে প্রথম সংক্ষেপ করেছিল তার হাত কর্তন করা হয়েছে।”
[যা তার লিখিত কিতাব ‘তাদরীবুর রাওয়ী’তে উল্লেখ আছে]
♦রসূল ﷺ এর নাম মুবারক লেখার পর দরুদ শরীফ সংক্ষেপে লেখা যাবে না (৪র্থ পর্ব)
রসূল নাম মুবারক এর সাথে দরুদ শরীফ সংক্ষেপে
(সাঃ), (ছঃ), (দঃ), (সা.), (সা:), (স), (Pbuh), (Pbh), (D), (S), (Sm), (ﺻﻠﻠﻢ), (ﺻﻠﻌﻢ), (ﻋﻢ), (ﺹ)
ইত্যাদি সংক্ষিপ্ত শব্দ দ্বারা দরূদ লেখার বিধান:
📖 ৪র্থ দলিল—
তাহতাবী আলা দুররিল মুখতার কিতাবে উল্লেখ আছে—
“অক্ষর দ্বারা দরুদ শরীফ লেখা মাকরূহ বরং পরিপূর্ণভাবে দরুদ শরীফ লিখবে।”
—[তাহতাবী আলা দুররিল মুখতার, ১ম জিলদ পৃষ্ঠা: ৬]
👉🏻 আল্লামা সৈয়দ তাহত্বাভী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) হাশিয়ায়ে দুররুল মুখতার–এ বলেছেন ফাতোয়ায়ে ‘তাতারখানীয়া’ থেকে বর্ণিত—
من کتب علیہ السلام بالھمزۃ والمیم یکفرہ لانہ تخفیف و تخفیف الانبیاء کفر
“যে ব্যক্তি علیہ السلام (আলাইহিস সালাম)-কে ءم(আঃ) লিখে তাকে কাফির বলা হবে। কেননা তা হেয় করা আর নবীদেরকে হেয় করা ‘কুফরী’।”
(নাউযুবিল্লাহ্) যদি হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে হয় তাহলে অবশ্যই নির্ঘাত কুফরী। অলসতা ও অজ্ঞতা বশতঃ এমন করলে উপরোক্ত বিধানের কাফের হবে না। তবে অবশ্যই তা যে বরকতহীন, বদকিসমত ও দূর্ভাগ্য এতে কোন সন্দেহ নাই।
আমি বলছি এটা প্রকাশ্য যে—
القلم احدی اللسانین
“কলম এক রসনা”
[অর্থাৎ,কলম ভাব প্রকাশের অন্যতম একটি মাধ্যম]।
صلی اللہ علیہ وسلّم
(ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জায়গায় অর্থহীন صلعم (সাঃ) লেখা তা যেন নবীজীর নাম মুবারক শুনে দরূদ না পড়ে الم غلم উচ্চারন করা।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন—
فبدل الذین ظلموا قولا غیر الذی قیل لھم فانزلنا علی الذین ظلموا رجزا من السماء بما کانوا یفسقون
“যারা অন্যায় করেছিল তারা তাদেরকে যা বলা হয়েছিল তার পরিবর্তে অন্য কথা বলল। অনাচারীদের প্রতি আমি আসমান থেকে শাস্তি প্রেরণ করলাম তাদের কুকর্মের কারণে”
বনী ঈসরাঈলদেরকে বলা হয়েছিল—
– قولوا حطۃ
অর্থাৎ ‘তোমরা বল-আমাদের গুনাহ ক্ষমা করুন।’
তৎপরিবর্তে তারা বলেছিল—
حنطۃ
‘গম দিন’ ।
এটিতো অর্থবোধক ছিল ।
এখানে তো আল্লাহ্ একটি নেয়ামতের উল্লেখ করতঃ নির্দেশ করেছেন,
یا ایھا الذین امنوا صلوا علیہ و سلموا تسلیما
অর্থাৎ ‘হে ঈমানদারগন! তোমরা নবীর উপর দরূদ ও সালাম প্রেরন কর’
اللھم صلی و سلم وبارک علیہ و علی الہ و صحبہ ابدا
(আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম ওয়া বারিক আলাইহি ওয়া আ’লা আলিহী ওয়া সাহবিহী আবাদা)
‘ওয়াজিব কিংবা মুবাহ যেভাবে হোক প্রত্যেক বার নবীর (ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাম মুবারক শুনলে, মুখে উচ্চারন করলে কিংবা কলম দ্বারা লিখতে এ বিধান প্রযোজ্য। লেখাতে হুজুর (ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নাম মুবারক আসলে صلی اللہ علیہ وسلّم (ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লেখার বিধান রয়েছে। এরই পরিবর্তে অর্থহীন صلعم, (সাঃ) عم, صللم (আঃ) লিখলে আল্লাহর গযব নাজিল হওয়ার কি ভয় করে না?
‘আলইয়াযু বিল্লাহি রব্বিল আলামিন’।
এটা দরূদের বিষয় হালকা মনে করলে কুফরী হবে। তার নিম্ন স্তরের সাহাবা ও আউলিয়া কেরামের নাম মুবারকে رضی اللہ تعالی عنہ (রদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) এর পরিবর্তে رض (রাঃ) লিখলে ওলামা কেরাম মাকরূহ এবং বঞ্চিত ব্যক্তির লক্ষণ বলেছেন।
আল্লামা সৈয়দ তাহত্বাভী (রদিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন—
یکرہ الرمز بالترضی بالکتابۃ بل یکتب ذالک کلہ بکمالہ
লেখার সময়ে “রদিয়াল্লাহু” কে ইশারায় লেখা মাকরূহ বরং তা পূর্ণাঙ্গভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
ইমাম নববী শরহে মুসলিম শরীফে বলেছেন,
ومن اغفل ھذا حرم خیراعظیما وفوت فضلا جسیما
‘যে উহা হতে গাফেল হয় সে বড় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত এবং মহা অনুগ্রহ হারিয়েছে’। (নাউযুবিল্লাহ্)
অনুরূপভাবে قدس سرہ (কুদ্দেসা সিররুহু)
বা رحمۃ اللہ علیہ (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর পরিবর্তে ق (কুঃ) কিংবা رح (রহঃ) লেখা বোকামী ও বরকতহীন। এসব বিষয় থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
আল্লাহ্ তায়ালা নেক কাজ করার সুযোগ দান করুক।
আমিন 🤲🏻
🔔 জ্ঞাতব্য বিষয়— নবীজীর (ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাম মুবারক এর পর (ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং সাহাবায়ে কিরামের নাম মুবারকের পর ‘রাদিয়াল্লাহু আনহু’ এবং আওলিয়া কিরামের পবিত্র নাম এর পর ‘রহমাহুল্লাহ/রহমাতুল্লাহি আলাইহি’ লেখার উপরোক্ত পদ্ধতি ও ফতোয়াটি শুধু আরবী নয় উর্দূ, বাংলা, ইংরেজী সহ ইত্যাদি আল্লাহর সৃষ্ট পৃথিবীর সকল ভাষার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
কেননা সকল ভাষা-ই আল্লাহর সৃষ্টি এবং সকল ভাষাতেই আল্লাহ্ ও তার হাবীবের (ছল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নাম মুবারক এবং সাথে সাথে সাহাবায়ে কিরাম ও আওলিয়ায়ে কিরামের পবিত্র নাম নেওয়া হয়।
সুতরাং, সকল ভাষায় লেখার ক্ষেত্রেই এগুলো পুরোপুরি ভাবে লিখতে হবে, কেননা এটাই হচ্ছে প্রকৃত আদব।
📖 সূত্র— “ফাতোয়ায়ে আফ্রিকা” কৃত-চতূর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দীদ, আলা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, শাহ্ আহমদ রেযা খান ফাযেলে বেরেলী (রহমাতুল্লাহি আলাইহি) প্রসঙ্গে ”তাহতাবী আলা দুররিল মুখতার” এর ১ম জিলদ, ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে– (ﺹ) অক্ষর দ্বারা সম্মানিত দরুদ শরীফ লেখা মাকরুহ, সম্মানিত দরুদ শরীফ পূর্ণ ভাবে লিখবে!
Comments
Post a Comment